বুক রিভিউ : ফারাক্কা- বাংলাদেশের ভাগ্য যেখানে বন্দি
বই- ফারাক্কা : বাংলাদেশের ভাগ্য যেখানে বন্দি
লেখক- আবদুস সাত্তার
লেভেল- পদ্মা যমুনা প্রকাশনী
পৃষ্ঠা-১১২
মুদ্রিত মূল্য- ১২৫ টাকা
প্রথম প্রকাশ- মে, ১৯৯৬
একই নদী। একই পানি প্রবাহ। কিন্তু সীমানা পেরুলেই বদলে যায় নাম। ওপারে গঙ্গা, এপারে পদ্মা। কলকাতা বন্দরকে রক্ষা করার জন্য এ নদীর উপর ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ নির্মান করা হয়। বাস্তবে কলকাতা বন্দরের কোনো উপকারেই আসেনি এ বাঁধ। কিন্তু পদ্মার অববাহিকায় বাস করা ৪ কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ননীয় দুঃখ-কষ্ট, হাহাকার। পানি পরিবেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। যেখানে প্রানের স্পন্দন সেখানেই পানি প্রয়োজন।
অনেকের মতে, যে দেশের যত পানি, সে দেশ তত ধনী। বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাঈল সেরাজেল দিন ১৯৯৫ সালের এক রিপোর্টে বলেছেন, বিংশ শতাব্দীতে বেশিরভাগ যুদ্ধ হয়েছে তেল নিয়ে, আগামী শতাব্দীতে যুদ্ধ চলবে পানি নিয়ে।
ফারাক্কায় দেশের উত্তরাঞ্চল আজ মরূপথের যাত্রী। দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল লবনাক্ততার শিকার। এসব অঞ্চলের ৮টি বৃহত্তর জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে।
ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মান করে হুগলি নদীতে পানি প্রত্যাহার করায় শুকনো মওসুমে প্রতি বছর উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক খরা। খরায় কৃষি, মৎস সম্পদ, বনজ সম্পদ, নৌ চলাচল, শিল্প, খাবার, পানি, জনস্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আর এ প্রতিক্রিয়ায় প্রতি বছর দেশের প্রায় ৩২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কৃষি ও পনি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে বলা হয়েছে, ফারাক্কার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে বিভিন্ন সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতি হয়েছে ৫২ হাজার ৬শ ৬০ কোটি টাকার সম্পদ।
লবণাক্ততার মারাত্মক আগ্রাসনে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি জেলা এখন পরিবেশগত বিপর্যয়ের শিকার। ১৯৯৪ সালে ভৈরব নদীর পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা ছিল ৪ হাজার ২শ পিপিএম। ১৯৯৫ সালে তা বেড়ে দাড়ায় ৭ হাজার ৮শ পিপিএম- এ। লবণাক্ততার মাত্রা প্রতিবছরই বেড়েই চলছে।
WHO- এর অনুমোদিত মাত্রানুযায়ী ৫শ পিপিএম- এর বেশি পানি পানের অযোগ্য। কিন্তু দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারন মানুষ এখন ১ হাজার ২শ পিপিএম পর্যন্ত লবনাক্ত পানি পান করছে।
শুকনো মওসুমে সিরাজগঞ্জ-জগন্নাথগঞ্জ ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তিস্তামুখ-বাহাদুরবাদ, নগরবাড়ী-আরিচা, আরিচা-দৌলতদিয়া চ্যানেলে পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। নদীতে অসংখ্য চর পড়ে। চাঁদপুর-ঢাকা ও চাঁদপুর-বরিশাল চ্যানেলে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হয়। ফারাক্কার প্রভাবে দক্ষিনাঞ্চলের ভৈরব নদীর তীরবর্তী সব শিল্প কারখানা অচল হয়ে পড়ে। খুলনা শিল্প এলাকায় ৪০ কি.মি দূর থেকে মিঠা পানি এনে কারখানা চালু রাখতে হয়। পরিনতিতে অতিরিক্ত লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়।
গঙ্গার পানি নিয়ে বিরোধ ১৯৫১ সাল থেকে। ইতোমধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। বৈঠকের নামে ডিপ্লোম্যাসি চলছেই। কিন্তু পানি নিয়ে বিরোধের অবসান আজও হয়নি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহারে চুক্তি হয়েছে। উজানের শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দুর্বল দেশ মেক্সিকোর মধ্যে পানি চুক্তি হয়েছে। ফ্রান্স স্পেনের দাবী মিটিয়ে ফেলেছে। অরোন্তি নদীর পানি নিয়ে সিরিয়া ও লেবাননের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। বাঁচার তাগিদে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন জর্ডান নদী ভাগাভাগি করে নিয়েছে। সিন্ধু নদের পানি নিয়ে ভারত-পাকিস্তান সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত পানি বন্টন সমস্যার সমাধান আজও হয়নি।
লেখক বিভিন্ন দেশ (ভারত, নেপাল) ঘুরে পানি সম্পদ নিয়ে গবেষনা করে বিভিন্ন পত্রিকায় কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করেন। নিবন্ধগুলো পাঠক মহলে প্রসংশা লাভ করলে, সেই নিবন্ধগুলোর ভিত্তিতে এই বই প্রকাশ করেন।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া :
ভারতে ফারাক্কার বিরুদ্ধে ৪টি উপন্যাস লেখা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ নিয়ে একটি গল্প, উপন্যাস পর্যন্ত লেখা হয়নি। সেই তাগিদে আবদুস সাত্তার বইটি লিখেছেন। বইটিতে লেখক দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে পুরো বিষয়টির উপর বেশ গোছালোভাবে আলোকপাত করেছেন। পুরো বইটি আমি দুই দিনে শেষ করেছি। বইটি পড়লে অনেক তথ্য-উপাত্ত এবং পদ্মাপাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পাওয়া যাবে।
রিভিউ লিখেছেন : মোশারফ হোসেন
I am looking for this book since November 2021, Can you you help me?
ReplyDeleteAssalamualikum
Deleteবইটি কোথায় পাওয়া যেতে পারে দয়া করে কেউ জানাবেন?